F ll মৃত্যুশয্যার পাশে ll - এইতো আমি

ll মৃত্যুশয্যার পাশে ll

ll মৃত্যুশয্যার পাশে ll 


জন্ম , মৃত্যু ,বিয়ে এই তিন বিধাতা নিয়ে l প্রবাদটা প্রায় প্রত্যেক মানুষের জন্য প্রযোজ্য l কিছু সংখ্যক লোকের জন্য প্রযোজ্য নয় একটি মাত্র বিষয় সেটি হলো বিয়ে l যারা সংসার ত্যাগী , সন্নাসী অথবা সাধু সন্ত তাদের তো বিয়ের প্রশ্নই আসে না l যাই হোক এ প্রসঙ্গে মহাকবির বাণী স্মরণে আসে - "জন্মিলে মরিতে হবে , অমর কে কোথা কবে ---" অর্থাত্ আমরা জন্মেছি মরতে তো হবেই , মৃত্যুর কাল দণ্ড থেকে কারুর নিস্তার নাই l 
          উপরের কথা গুলো না বললেও হয়তো চলে যেতো তবুও নিজের মনের গতিকে একটু প্রাধান্য দিলাম l আসলে বহুদিন আগের একটি বিশেষ ঘটনা মনে পড়ে গেলো l আমার কাছে বিশেষ করে একটি স্মরণীয় দিন l তারিখটা ছিলো ২৭ শে জৈষ্ঠ্য , বাংলা সন ১৪১৪ l সোমবার l এর কয়েক মাস আগে থেকে আমার ঠাকুমা মানে আমার বাবার মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল l ধীরে ধীরে চলার ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছিল l আমি কিংবা আমরা সমস্ত নাতি নাতনিরা তাকে বুড়োমা বলেই ডাকতাম l আমার জ্ঞান হওয়ার আগে থেকেই দেখে এসেছি বুড়োমা আমাকে খুব ভালো বাসত l সবার থেকে আমার প্রতি তার একটু বেশি টান ছিলো l তাছাড়া আমি ছিলাম তখন সবার চেয়ে ছোট l আমি ছিলাম খুব আদরের l থাক ওসব কথা , বুড়োমাকে ডাক্তার দেখানো চলছিলো l সেরে ওঠেনি বরং অবস্থা দিনকে দিন বিগড়ে যাচ্ছিল l তখন বয়স প্রায় চৌরাশি হয়ে গেছে l আমার বাবা জ্যাঠামশাইয়েরা পাঁচ ভাই আর দুই বোন l বাবা সবার থেকে ছোট l আমার বড় জ্যাঠা, সেজো জ্যাঠা আর আমরা একসাথে আমার ঠাকুরদার বাস্তু ভিটেয় থাকতাম এখনো থাকি l আমার মেজো আর শানো জ্যাঠা দুজনেই জায়গা কিনে পাশের একটি পাড়ায় থাকে l বুড়োমার অসুখের প্রথম কিছুদিন আমাদের বাড়িতে ছিলো l তারপর আমার বড় পিসিমার বাড়ি গিয়ে থাকতো কিছুদিন l আবার আমাদের বাড়িতে ফিরে এলো l এরপর মেজো জ্যাঠাবাবুদের বাড়ি ছিলো বেশ কয়েকদিন l ওদের বাড়িতে থাকাকালীন আমার মা রান্না করে টিফিন কৌটোতে করে নিয়ে বুড়োমাকে দেখতে যেতো l নিজে হাতে খাইয়ে আসত l এর কিছুদিন পর শানো জ্যাঠাবাবুদের বাড়ি গিয়ে বুড়োমা রইলো , তারপর প্রায় একমাস কেটে যায় l আমরা প্রায়ই দেখতে যেতাম l তখন বুড়োমার প্রায় শেষ অবস্থা l বড়দের মুখে শুনেছি বেশিদিন বাঁচবে না l খুব খারাপ লাগত , কষ্টও হতো কিন্তু ধীরে ধীরে সয়ে গেলো সেগুলো l ঐ ২৭ শে জৈষ্ঠ্য ১৪১৪ l ভোরবেলা ! না তারও আগে , রাত আড়াইটা তিনটে হবে তখন খবর আসে যে বুড়োমার খুব বাড়াবাড়ি, হয়তো বাঁচবে না l আমি শোনা মাত্রই অন্ধকারে দিয়েছি ছুট l বিছানা থেকে উঠে দেখেছি বাবা নেই l মানে আমার আগে জানতে পেরে আগেই চলে গেছে l আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি l তখন 2007 সাল হবে l আমার বাড়ি থেকে ওদের বাড়ির দূরত্ব ছিলো প্রায় এক কিলোমিটার কি একটু বেশি l আমি অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে দ্রুত চলেছি কয়াল পাড়ার দিকে , অবশ্য গন্তব্য ছিলো প্রায় সর্দারের চকের কোলে l স্কুলমাঠ পার হয়ে , ইটের পুল পেরিয়ে ,বাম দিকে শিবমন্দির , গাজনতলা রেখে একা এগিয়ে চলেছি l পথে যেতে যেতে ভূতের ভয় যে পাচ্ছিল না তা নয় ! মাঝে মাঝে পিছনে ফিরে দেখছিলাম কোনো ভূতে পিছু নিচ্ছে কি না ! আমার অবশ্য সাহসের কমতি ছিলনা , নির্ভয়ে রাত বিরেতে সফর করাটা আমার কাছে অ্যাডভেঞ্চারের মতো লাগত l এতক্ষণে ঘুঘুর মোড় থেকে বেঁকে শিশির ভেজা তড়তড়ে রাস্তা দিয়ে মিলনদা দের বাড়ির পাশে থেকে যখন পার হচ্ছিলাম তখন ঠিক তার বিপরীত দিকের পুকুর ঘাট থেকে সুধার বৌ কেরে কেরে করে ডেকে উঠলো l সে খানিকটা ভয় পেয়েই চিত্কার করেছিল l কারণ, আমি পথে যে ভাবে হেঁটে যাচ্ছিলাম তাতে আচমকা যে কেউই ভয় পেতে বাধ্য l রাস্তায় দুম দুম করে আওয়াজ হচ্ছিল l সুধার বৌ মাথার উপর কেরোসিনের টিন(ল্যাম্প ) বসিয়ে যখন আমাকে উদ্যেশ্য করে কে কে করছিল - আমি বিরক্তি ভরে উত্তর দিয়েছিলাম - " তোর বাবা " ! সুধার বৌ রেগে গেছিল কিনা জানিনা বলতে শুনেছি - এ্যাই ধরতো রে ! একটুখানি ছেলে , বড় বড় কথা ! আমার আবার হাসিও পাচ্ছিল , আমি বললাম আয় ধরবি নাকি আয় , ঠ্যালা মেরে জলে ফেলে দোবো ! তোর নাকি ভূত চেপেছিলো ? এখন ছেড়ে গেছে ? আসলে আমি তো মোটামুটি ভাবে পাড়ার সকলের খবর কম বেশি জানতাম l আর সুধার বৌয়ের যে ভূতে চাপে সেটাও অজানা ছিলনা l সেই ভাবে ঝোপ বুঝেই কোপ l আমাকে পরে গালাগালি দিতে দিতে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেছে l আমিও একছুটে চলে গেছি শানো জ্যাঠামশাইয়ের বাড়ি l ওদের বাড়ির দুশো আড়াইশ মিটার দূর থেকেই শোনা যাচ্ছিল কান্নার শব্দ ! নারী -পুরুষ কণ্ঠের গোলযোগ ! সুমুখ দরজা থেকে শুরু করে ভিতরে উঠানে লোকজন ভর্তি l বাইরেও বেশ কিছুজন যাতায়াত করছে l বাতাসে রাশি রাশি মন্তব্য উড়ে বেড়াচ্ছে l ধীরে ধীরে পাড়া ভেঙে লোকজন দেখতে আসছে l আর যাই হোক বুড়োমা খুব বিখ্যাত ছিলো আসে পাশের গ্রামে l

CONVERSATION

0 comments:

Post a Comment